
আগরতলা, ১৩ জুন:
ত্রিপুরা খাদ্য স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং কৃষিক্ষেত্রে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’-এর সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন, এমনটাই জানালেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
আজ আগরতলার নেগিচেরা হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী জানান, ২৯ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২ দিনব্যাপী এই জাতীয় প্রচারাভিযানে ত্রিপুরা বিভিন্ন মূল লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। এই অভিযান খরিফ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা গড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।রাজ্য যেখানে ১.৭২ লক্ষ কৃষকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েছিল, সেখানে বাস্তবে ১.৯৫ লক্ষ কৃষক এতে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৬৬,৮০০-রও বেশি নারী কৃষকের অংশগ্রহণ ছিল, যা মোট অংশগ্রহণকারীর প্রায় ৩৪ শতাংশ।কৃষক সংলাপ সভার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
রাজ্য জুড়ে মোট ৮৭২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে লক্ষ্য ছিল ৮৬৪টি। প্রতিদিন গড়ে ৭২টি সভা আটটি জেলার প্রতিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।এই অভিযান চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী, বিধায়ক, কৃষি বিজ্ঞানী এবং সরকারি আধিকারিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
কৃষিমন্ত্রী নাথ জানান, অভিযানের ‘ল্যাব টু ল্যান্ড’ ভাবনার আওতায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK), আইসিএআর, কৃষি ও উদ্যানপালন বিভাগ, মৎস্য ও পশুপালন বিভাগ এবং ভেটেরিনারি কলেজের বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন।এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে হাইড্রোপনিক্স, ড্রোন-চালিত চাষাবাদ, জৈব ও প্রাকৃতিক চাষপদ্ধতি, এবং প্রিসিশন এগ্রিকালচারের মতো আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করা হয়।
মন্ত্রী নাথ জানান, রাজ্যের তিনটি জেলা – দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী ও ধলাই – ইতিমধ্যেই চাল উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের ৫৮টি পল্লী ব্লকের মধ্যে ৩০টি ব্লক খাদ্য স্বনির্ভর।তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে খোয়াই ও সেপাহিজলা জেলাকেও স্বনির্ভর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অভিযানের সুফল হিসেবে আরও এক লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা রাজ্যের ১.৪ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির একটি বড় অংশ পূরণ করতে সাহায্য করবে।ত্রিপুরার এই অগ্রগতি দেশের বৃহত্তর কৃষি রূপান্তরের অংশ বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এক সময় আমেরিকা থেকে চাল আমদানি করতে হত। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ, যেখান থেকে ভিয়েতনাম, নেপাল, বাংলাদেশে চাল রপ্তানি হয়। এই পরিবর্তনই প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ দর্শনের প্রতিফলন।”উল্লেখ্য, এই অভিযান দেশজুড়ে একযোগে ৭০০টি জেলায় পালিত হয়েছে, যেখানে অংশ নিয়েছেন ১৬,০০০-র বেশি কৃষি বিজ্ঞানী ও ২,১৭০ জন কৃষি আধিকারিক। এর মাধ্যমে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৃষি উন্নয়নের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি আরও একবার সুদৃঢ় হয়েছে, যেখানে ত্রিপুরা হয়ে উঠছে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
Leave a Reply